জান্নাতে প্রিয় নবীর সঙ্গ ও সাহচর্য লাভের উপায়

একজন মুমিনের হৃদয়ের গভীরে যার ছবিটি অঙ্কিত থাকে তিনি হলেন বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মনের সকল ভালোবাসা-মহব্বত নিবেদিত হয় তাঁর জন্য। তাঁরই পথে উৎসর্গিত হয় তাঁর জীবন-মরণ। এটাই প্রকৃত মুমিনের চিত্র। তাঁর দর্শন লাভে যারা ধন্য হয়েছেন, ঈমান এনেছেন তারা তো সর্বোচ্চ সম্মানিত সাহাবী উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের নাম উচ্চারিত হলে সকলেই পরম শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলে, রাযিয়াল্লাহু আনহু।
সেই মহৎপ্রাণ সাহাবীগণও নবীজীর সাহচর্র্যে থেকে তৃপ্ত হতে পারেননি। কারণ, এ পৃথিবী যে ক্ষণস্থায়ী। তাই তারা পরকালের চিরস্থায়ী জীবনেও তাঁর সঙ্গ ও সাহচর্য লাভের আশা-আকাঙ্ক্ষা লালন করতেন। তাঁর উম্মতের ঐ সকল লোক যারা এতিম হয়ে জন্ম গ্রহণ করলো, তাঁর সাক্ষাৎ পেল না তাদের তো সদা-র্সবদা হৃদয়ের রক্তক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে। তাঁকে একবার স্বপ্নে হলেও পেতে চায়। সর্বোপরি অন্তরের অন্তস্তলে পরকালে তাঁর সাথে মিলিত হওয়ার তামান্না লালন করে। উম্মতের এ তামান্না পূরণেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাযি.কে বললেন,
إذا أردت اللحوق بي فليكفك من الدنيا كزاد الراكب وإياك ومجالسة الأغنياء ولا تستخلعي ثوبا حتى ترقعيه
যদি তুমি (পরকালে) আমার সংশ্রব লাভ করতে চাও, তাহলে একজন মুসাফিরের (সামান্য পরিমাণ) পাথেয়ই যেন দুনিয়াতে তোমার জন্য যথেষ্ট হয়। আর সম্পদশালী ও বিত্তবান থেকে দূরে থেকো এবং কোন কাপড় তালি না লাগানো পর্যন্ত পুরাতন মনে করো না। তিরমিযি : ১৭৮০
উল্লিখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়েশা রাযি.কে জান্নাতে তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার উপায় হিসেবে তিনটি উপদেশ দিয়েছেন। প্রিয় রাসূলের সঙ্গে আখেরাতে মিলিত হওয়ার আশা পোষণকারী প্রত্যেক মুমিনের জন্য তা পালন করা জরুরী।
প্রথম উপদেশ : ـ فليكفك من الدنيا كزاد الراكب একজন মুসাফিরের (সামান্য পরিমাণ) পাথেয়ই যেন দুনিয়াতে তোমার জন্য যথেষ্ট হয়। একজন মুসাফির, যে কোথাও সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে সে তো অধিক পরিমাণ সামানপত্র সঙ্গে নেয় না। তার সামানপত্র অতি অল্প এবং যৎসামান্যই হয়ে থাকে। যেটুকু না হলেই নয় শুধু সেটুকু পাথেয় সঙ্গে নিয়ে সে সফর করে থাকে। সে হিসেবে দুনিয়ার জীবনে একজন মুসাফিরের মতো জীবনধারণ পরিমাণ সামান্য পাথেয় ও উপকরণ গ্রহণ করবে।
দ্বিতীয় উপদেশ : তুমি ধনী ও সম্পদশালীদের সাহচর্য এড়িয়ে চলবে। অর্থাৎ ঐ সমস্ত ধনীদের থেকে দূরে থাকবে, যাদের অন্তর দুনিয়ার ভালোবাসা ও লোভ-লালসায় পূর্ণ এবং দুনিয়াকে পাওয়ার জন্য বেকারার ও অস্থির। এখানে ধনী বলে তাদের বোঝানো হয়নি, যাদেরকে দুনিয়াতে বাহ্যত বিত্তশালী দেখা যায় কিন্তু তাদের অন্তর দুনিয়ার আকর্ষণ থেকে মুক্ত, যারা ঐশ্বর্য আর বিত্তের প্রতি আকৃষ্ট ও আসক্ত নয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা রুমী রহ. মসনবী শরীফে একটি সুন্দর উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি বলেন,
آب در کشتی ہلاک کشتی است آب اندر زیر کشتی پشتی است
জলযানের ভেতর জলরাশির অস্তিত্ব জলযানের জন্য বিনাশ ও বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। পক্ষান্তরে জলযানের বাইরে জলরাশির উপস্থিতি জলযানের অস্তিত্ব ও চলাচলের স্বার্থেই অনিবার্য।
দুনিয়াতে মানুষের বসবাস হল নদী বা সমুদ্রে চলাচল করা জলযানের মত। জলযান পানি ছাড়া চলতে পারে না। আবার জলযানের ভিতরে পানি প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। যদি অসর্তকতা বশত কিংবা ছিদ্র হয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করে তখন জলযান অথৈ জলরাশিতে তলিয়ে যায় এবং যাত্রীদের সলীল সমাধি ঘটে। তদ্রূপ দুনিয়া হল পানির মত। জলযান যেমন পানি ছাড়া চলতে পারে না, তেমনি মানুষ দুনিয়াতে ধন-সম্পদ ছাড়া বসবাস করতে পারে না। দুনিয়া যদি তার কাছে আখেরাতের তুলনায় বড় না হয়; বরং আখেরাতের চিন্তা ও ফিকিরই তার অন্তরে প্রবল হয় তবে তো দুনিয়া তার জন্য আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহে উপকারী বস্তু সাব্যস্ত হবে। কিন্তু যখন কারো অন্তরে বিন্দুমাত্র দুনিয়ার ভালোবাসা প্রবেশ করে তখন এ দুনিয়াই তার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নৌকায় পানি প্রবেশের কারণে যেমন নৌকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং নির্মমভাবে যাত্রীদের মৃত্যু ঘটে। ঠিক দুনিয়া কারো অন্তরে প্রবেশ করলে তা তাকে জাহান্নামের অতল গহ্বরে তলিয়ে দিবে।
দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও আরাম-আয়েশের জন্য মানুষ ছয়টি বিষয় উপায়-উপকরণ হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু মানুষ শত চেষ্টা করেও দুনিয়াতে এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভোগ করতে পারে না। নিম্নে ছয়টি বিষয় উল্লেখ করা হল,
১. খাদ্য : যার প্রতি রয়েছে মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা ও প্রবল আকর্ষণ। প্রত্যেকেই রুচিসম্মত উন্নত খাবার পেট পুরে খেতে চায়। সর্বদা সুস্বাদু খাবার গ্রহণ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের এ আশা পূরণ হয় না। কারণ, মানুষ চাইলেই সব ধরনের ভালো ও সুস্বাদ খাবার গ্রহণ করতে পারে না। তার হয়তো এমন খাবারের সাধ জেগেছে যা জোগাড় করার সাধ্য তার নেই অথবা সামর্থ্য থাকলেও শারীরিক কোন সমস্যার কারণে চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কখনো এ খাবার খেয়েই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে, যে খাদ্য গ্রহণ করে সে পরিতৃপ্তি লাভ করত তাই তার অস্বস্তি ও অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২. পোশাক : ভালো কাপড়, সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি রয়েছে মানুষের স্বভাবজাত দুর্বলতা। মানুষ চায় রুচিসম্মত সুন্দর আধুনিক ডিজাইনের পোশাক পরিধান করতে। এর জন্য চেষ্টাও করে থাকে। মানুষের এ আশাও পরিপূর্ণ হয় না। কারণ, পোশাকের ডিজাইন পরিবর্তনশীল। একটি পোশাক আজ সবার কাছে খুব সুন্দর ও আধুনিক কিন্তু কালই তা পুরাতন ও সেকেলে হয়ে যায়। কিছুদিন অতিবাহিত হতে না হতেই এ মডেল পাল্টে যায়। দিন দিন নিত্য নতুন ডিজাইন আবিষ্কৃত হচ্ছে। তাই সে অস্বস্তি ও যন্ত্রণায় ভোগে। এ ছাড়া শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ও স্বর্ণ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোন মুসলমানের সামর্থ্য থাকলেই সে তা ব্যবহার করতে পারবে না। এভাবে দেখা যায়, পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবার নয়।
৩. বাসস্থান : সুন্দর কোন বাড়িতে বসবাস করতে সকলেরই মন চায়। মানুষ চায় সুরম্য প্রাসাদ তৈরি করতে। স্বাচ্ছন্দ্যে, সুখ-শান্তিতে জীবন যাপন করতে। বাগান বাড়িতে মনের আনন্দে পায়চারি করতে। মানুষের এ আশাও পূর্ণ হয় না। কারণ, মানুষ এক জায়গায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারে না। অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তাই সে চলে যায় অন্যত্র। সেখানেও শান্তি হয় না। যাদের সহায়-সম্পত্তি নেই তারা তো চাইলেও নিজেদের মনমতো বাসস্থান নির্মাণ করতে পারে না। আর যাদের অঢেল সম্পত্তি রয়েছে তারাও একের পর এক বাড়ির ডিজাইন পরিবর্তন করতে থাকে। উন্নত থেকে উন্নততর এলাকায় জায়গা, বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করে। কিভাবে আরও উন্নত ও আধুনিক করে বাসস্থান নির্মাণ করা যায় তার চিন্তায় বিভোর থাকে। এভাবে জায়গা আর বাড়ি পরিবর্তন করতে করতেই মৃত্যু এসে যায় এবং অতৃপ্তি নিয়েই কবরে রওয়ানা করে।
৪. স্ত্রী : মানুষ চায় তার জীবনসঙ্গিনী যেন রূপবতী ও গুণবতী হয়। আশা করে তাকে নিয়ে সুখের সংসার করবে। কিন্তু সকলেই কি তাদের আশানুরূপ জীবনসঙ্গীনী পায়? তাকে নিয়ে সকলেই সুখে জীবন কাটাতে পারে? পৃথিবীর সকল মানুষের স্বভাব-চরিত্র এক নয়, তাই মন-মেজাজ ও স্বভাব-চরিত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনে এক ও অভিন্ন হওয়ার আশা করা বোকামি। আর কেউ যদি তার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জীবনসঙ্গীনী পেয়েও যায় তাতেও কি সে সুখ স্থায়ী হয়? তাকে কি সে আজীবন সঙ্গী হিসাবে কাছে পায়? পায় না। কারণ, সে তো অমর নয়।
৫. নিরাপত্তা : যদি উল্লিখিত বিষয়গুলো কারো অর্জিত হয়েও যায় তথাপি তার মনের দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা ও ভয়ভীতি দূর হয় না। তখন তার চোর, ডাকাত, শত্রু ও সন্ত্রাসীদের আক্রমণের ভয় থাকে। তার এ সুখ ও শান্তি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় সে পেরেশান থাকে। ধন-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি হাতছাড়া ও বেদখল হওয়া অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়।
৬. অমর জীবন : যদি আমরা ধরে নেই যে, কোন ব্যক্তি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তার পরও সে আনন্দ এবং মনের প্রফুল্লতা থেকে বঞ্চিত। কারণ, সে মৃত্যুর ব্যাপারে পেরেশান থাকে। সে জানে না মৃত্যুর ফেরেশতা কখন তার দরজায় এসে দাঁড়াবে এবং তার প্রাণ নিয়ে যাবে।
বুঝা গেল, যে ছয়টি বিষয় অর্জন করলে মানুষ সুখ-শান্তি লাভ করতে পারত সেগুলোর কোনটিই সে পূর্ণরূপে দুনিয়াতে লাভ করতে সক্ষম নয়। তবে এ ছয়টি বিষয় পরকালে পরিপূর্ণরূপে একজন মুমিন ও মুত্তাকী বান্দা লাভ করবে। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা এর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন,
اِنَّ الْمُتَّقِیْنَ فِیْ مَقَامٍ اَمِیْنٍ ﴿৫১﴾ فِیْ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوْنٍ ﴿ۙ৫২﴾ یَّلْبَسُوْنَ مِنْ سُنْدُسٍ وَّ اِسْتَبْرَقٍ مُّتَقٰبِلِیْنَ ﴿৫৩﴾ کَذٰلِکَ ۟وَ زَوَّجْنٰمْ بِحُوْرٍ عِیْنٍ ﴿৫৪﴾ یَدْعُوْنَ فِیْهَا بِكُلِّ فَاکِهَۃٍ اٰمِنِیْنَ ﴿৫৫﴾ لَا یَذُوْقُوْنَ فِیْهَا الْمَوْتَ اِلَّا الْمَوْتَۃَ الْاُوْلٰی وَ وَقٰهُمْ عَذَابَ الْجَحِیْمِ ﴿৫৬﴾
নিশ্চয়ই মুত্তাকীগণ নিরাপদ স্থানে অবস্থান করবে- বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাসমূহে। পরিধান করবে চিকন ও পুরু রেশমি বস্ত্র। মুখোমুখি হয়ে বসবে। এরূপই হবে এবং আমি তাদেরকে আনতলোচনা স্ত্রী দেবো। তারা সেখানে নিশ্চিন্তে বিভিন্ন ফল-মূল আনতে বলবে। তারা সেখানে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে না; প্রথম মৃত্যু ব্যতীত এবং আপনার পালনকর্তা তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। সূরা দুখান : ৫১-৫৬
বুঝা গেল দুনিয়াতে কখনো পরিপূর্ণ সুখ-শান্তি লাভের আশাও করা যায় না। দুনিয়ার শান্তির পিছনে যারা ছুটে বেড়ায় তারা তো যেন মরীচিকার পিছনেই কেবল ছুটে বেড়াচ্ছে। পূর্ণ শান্তি ও প্রশান্তি লাভ হবে তো পরকালে, জান্নাতে। তাই আমাদেরকে সেই জান্নাত লাভ করার জন্য মেহনত ও মুজাহাদা করে যেতে হবে।
তৃতীয় উপদেশ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়েশা রাযি.কে বলেছেন, তুমি কোন কাপড় তালি লাগানো ছাড়া পুরাতন হয়েছে মনে করো না। অর্থাৎ সাদাসিদা জীবন অবলম্বন কর।
হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমি একদিন মুসলিম জাহানের খলীফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযি.কে দেখতে পেলাম তিনি তিনটি তালিযুক্ত একটি কাপড় পরেছেন। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায় তিনি বারটি তালিযুক্ত লুঙ্গি পরিধান করেছেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উক্ত হাদিসের উপর আমল করে পরকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গ ও সাহচর্য লাভের তাওফীক দান করুন। আমিন।

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ    www.monthlyniamat.com

Leave a comment

অহঙ্কার একটি মারাত্মক ব্যাধি

অহঙ্কার সকল গোনাহের মূল
আমাদের শরীরে যেমন বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি হয় তেমনি আত্মারও বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হয়। আমাদের আত্মা যে সকল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হল অহঙ্কার। অহঙ্কারই পৃথিবীতে সংঘটিত সর্বপ্রথম গোনাহ। হযরত আদম আ.কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সকলকে নির্দেশ দিলেন- আদমকে সিজদা কর। সকলেই আল্লাহ পাকের নির্দেশমত আদম আ.কে সিজদা করেছে। কিন্তু ইবলিস অহঙ্কার বশত সিজদা করেনি। সে বলেছে-
اَنَا خَیْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِیْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَهٗ مِنْ طِیْنٍ
আমি তার থেকে উত্তম। আপনি তো আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। সূরা ছাদ : ৭৬
‘আমি তার থেকে উত্তম’ এ কথা বলে অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে ইবলিস আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ অমান্য করেছে। ফলে সে আল্লাহ পাকের মহান দরবার থেকে বিতাড়িত হয়েছে, আল্লাহ পাকের রহমত ও মাগফেরাত থেকে চিরবঞ্চিত হয়েছে। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে বলেন-
وَ لَهُ الْکِبْرِیَآءُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْحَکِیْمُ
আসমান ও যমীনে অহঙ্কার ও বড়ত্ব একমাত্র তারই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। সূরা জাছিয়া : ৩৭
অহঙ্কার ও বড়ত্বের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তিনি ছাড়া আর কারো অহঙ্কার করার অধিকার নেই। এ আয়াতে لَهُ শব্দটিকে বাক্যের শুরুতে আনা হয়েছে। সাধারণ নিয়মে বাক্য হওয়া উচিত ছিল এমন-
الْکِبْرِیَآءُ لَهُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ
কিন্তু এখানে আরবী ব্যকরণের আরেকটি নীতি অনুসরণ করে لَهُ শব্দটিকে বাক্যের শুরুতে আনা হয়েছে বিশেষ এক উদ্দেশ্যে। আরবী ব্যাকরণের একটি মূলনীতি হল-
تقديم ما حقه التأخير يفيد الحصر
অর্থাৎ যে শব্দটি স্বাভাবিকভাবে পরে আসার কথা সে শব্দটি যদি আগে আনা হয় তাহলে এ বাক্যে উল্লিখিত হুকুমটি বিশেষ এক স্থানের সঙ্গেই নির্দিষ্ট হয়ে পড়ে। তো এখানে لَهُ শব্দটিকে আগে এনে বুঝানো হয়েছে যে, অহঙ্কার একমাত্র আল্লাহ পাকের বিশেষ গুণ, এটা তার জন্য নির্দিষ্ট আর কারো মধ্যে তা থাকতে পারে না।
আমাদের শারীরিক রোগ-ব্যাধির যেমন বিজ্ঞ চিকিৎসক আছেন তেমনি আত্মার রোগ-ব্যাধিরও বিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে আত্মার রোগ বিষয়ে বিজ্ঞ ও পারদর্শীদের অন্যতম ইমাম গাযালী রহ.। তিনি আত্মার রোগ ও তার চিকিৎসা বিষয়ে গভীর জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন অনন্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অহঙ্কার সম্বন্ধে বলেন, অহঙ্কার হল সকল গোনাহের মূল। অহঙ্কারের কারণেই মানুষ রাগ করে, অহঙ্কারের কারণেই অন্যের গীবত করে, চোগলখোরী করে। অহঙ্কারের বশবর্তী হয়েই মানুষ ঝগড়া ও মারামারিতে লিপ্ত হয়, এমনকি অন্যকে হত্যাও করে।

অহঙ্কারের সংজ্ঞা
মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
الكبر بطر الحق وغمط الناس
অহঙ্কার হল, সত্যকে অস্বীকার এবং অন্যকে ছোট মনে করা। সহীহ মুসলিম
হযরত সাইয়্যেদ সুলায়মান নদভী রহ. একবার হযরত থানভী রহ. এর দরবারে উপস্থিত হলেন। হযরতের সোহবত ও সংস্পর্শ লাভ করে ফিরে আসার সময় আরজ করলেন- হযরত আমাকে কিছু নসীহত করুন। অথবা তিনি প্রশ্ন করেছিলেন- তাসাওউফ কী? হযরত থানভী রহ. উত্তরে বললেন- আমার মত একজন সাধারণ তালিবুল ইলম আপনার মত আল্লামাকে কী বলতে পারে?! এরপর থানভী রহ. সুলায়মান নদভী রহ. এর হাত ধরে বললেন- তাসাওউফ এর সারকথা হল, নিজেকে মিটিয়ে দেয়া। নিজেকে ছোট ও হীন মনে করা। হযরত থানভী রহ. একথা বলে সুলায়মান নদভী রহ. এর হাত একটি ঝারা দিলেন। সাইয়্যেদ সুলায়মান নদভী রহ. বলেন, হযরতের এ ঝারা আমার অন্তরে গিয়ে আঘাত করে এবং ক্বলবের মধ্যে প্রচণ্ড নাড়া দেয়। ফলে আমার অন্তরে বিনয় পয়দা হয়ে যায়।

অহঙ্কার একটি গোপন ব্যাধি
অহঙ্কার রোগটি অত্যন্ত ভয়াবহ কিন্তু এটি খুবই গোপন ও সূক্ষ্ম ব্যাধি। যেমন, ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ। ক্যান্সার হলে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মানুষের বাহ্যিক শরীর দেখে ক্যান্সার হয়েছে কি না বোঝা সম্ভব নয়। শরীরে যখন ব্যথা হয় তখন মানুষ ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার তখন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ক্যান্সার নিশ্চিত করে। ব্যথা মূলত ক্যান্সার নয়। ব্যথা হল, ক্যান্সারের উপসর্গ ও আলামতমাত্র। প্রসঙ্গত আমরা একটু লক্ষ করলে দেখতে পাব যে, আমাদের শরীরে যে ব্যথা হয় তা মূলত আল্লাহ পাকের একটি রহমত। কারণ, ব্যথাটা কোন না কোন রোগের উপসর্গ বা আলামত। ব্যথা হয় বলেই তো আমরা ডাক্তারের কাছে যাই এবং চিকিৎসা গ্রহণ করি। ব্যাথা না হলে তো আমরা শরীরের অভ্যন্তরের রোগ টের পেতাম না। একসময় আমাদের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেত।
তো বলছিলাম- অহঙ্কার একটি গোপন ও সূক্ষ্ম ব্যাধি। যা সাধারণভাবে আমাদের উপলব্ধিতে আসে না। তবে অহঙ্কারের কিছু উপসর্গ ও আলামত রয়েছে যা দ্বারা সহজেই আমরা নির্ণয় করতে পারি, আমাদের মাঝে অহঙ্কার আছে কিনা। অহঙ্কারের আলামত হল, অন্যকে ছোট মনে করা। কেউ যদি অন্যকে ছোট মনে করে আর নিজেকে ভালো ও উত্তম মনে করে তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে অহঙ্কার রয়েছে।

একটি সংশয় নিরসন
এখানে একটি সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হতে পারে যে, অন্যকে ছোট মনে করা এবং নিজেকে অন্য থেকে বড় ও উত্তম মনে করাই যদি অহঙ্কার হয় তাহলে তো আমাদের অনেক ক্ষেত্রে অসত্য ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। কখনো আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের অকৃতজ্ঞ হতে হবে। যেমন, একজনের বয়স ৫০ বছর আর আরেক জনের বয়স ২০ বছর। এখানে তো স্পষ্টই যে, যার বয়স ৫০ সেই বড় এবং যার বয়স ২০ সে ছোট। বয়সে যে বড় সে যদি এখন নিজেকে বড় মনে করে এবং ২০ বছর বয়সের ব্যক্তিকে তার থেকে ছোট মনে করে তাহলে কি তা অহঙ্কারের অন্তর্ভুক্ত হবে? এ অবস্থায় সে নিজেকে ছোট মনে করলে তো তা মিথ্যা হবে। কোন একজন আলেম কি একজন জাহেল থেকে নিজেকে নীচু ও খারাপ মনে করবে? যদি তাই হয় তাহলে তো সে ইলমের নেয়ামতকে ছোট ও হীন মনে করল। অথচ আল্লাহ তাআলা স্বয়ং কুরআনে কারীমে বলেছেন-
قُلْ هَلْ یَسْتَوِی الَّذِیْنَ یَعْلَمُوْنَ وَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ
যারা জানে আর যারা জানে না তারা উভয়ে কি সমান হতে পারে? সূরা যুমার : ০৯
আল্লাহ তাআলা স্বয়ং যখন আলেম ও গায়রে আলেমের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করেছেন এবং আলেমকে মর্যাদাবান সাব্যস্ত করেছেন তখন কোন আলেম নিজেকে কোন গায়রে আলেম থেকে ছোট ও হীন মনে করবে কীভাবে?
এমনিভাবে এক ব্যক্তি খুবই অসুস্থ আর আরেকজন সম্পূর্ণ সুস্থ অথবা এক ব্যক্তির শারীরিক গঠন ও আকৃতি পরিপূর্ণ ও সুন্দর আর অপর একজনের শারীরিক গঠন অসম্পূর্ণ- এ অবস্থায় সুস্থ এবং শারীরিক গঠনে পূর্ণ ও সুন্দর ব্যক্তিটি কি নিজেকে অসুস্থ এবং শারীরিক গঠনে অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত ব্যক্তি থেকে ছোট ও হীন মনে করবে? এমনটি করলে তো আল্লাহর নেয়ামতের চরম অকৃতজ্ঞতা হবে।
এ সংশয় ও সন্দেহ দূর করার জন্য হযরত থানভী রহ. এর একটি উক্তি উল্লেখ করছি। হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. বলেন-
اپنے آپ کو اکمل سمجھنا کبر نہیں افضل سمجھنا کبر ہے
‘নিজেকে অন্যের তুলনায় নেয়ামতের দিক থেকে পরিপূর্ণ মনে করা অহঙ্কার নয়; বরং অন্যের তুলনায় নিজেকে উত্তম মনে করা অহঙ্কার।’
একজন আলেম অবশ্যই নিজেকে ইলমের নেয়ামতে পূর্ণ মনে করবে, একজন সুস্থ সবল ও সুন্দর ব্যক্তি অবশ্যই নিজেকে সুস্থতার নেয়ামতে নিজেকে পূর্ণ মনে করবে এবং আল্লাহর শোকর আদায় করবে কিন্তু তাই বলে নিজেকে এ নেয়ামতের কারণে অন্যের তুলনায় ভাল ও উত্তম মনে করবে না। নিজেকে ভাল ও উত্তম মনে করলেই তা অহঙ্কারের অন্তর্ভুক্ত হবে।

একটি দৃষ্টান্ত
একজন ব্যক্তি উঁচু পাহাড়ে আরোহণ করল। সে যদি উঁচু পাহাড় থেকে পাহাড়ের নিচের মানুষদের দিকে তাকায় তাহলে সে সবাইকে ছোট ছোট দেখতে পাবে। সে উঁচুতে থাকার কারণে নিচের সকল বস্তুই তার কাছে ছোট মনে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, সবকিছু আগের মতই আছে। তদ্রূপ যারা নিচে অবস্থান করছে তারা পাহাড়ের দিকে তাকালে পাহাড়ে আরোহনকারী ব্যক্তিটিকে ছোট দেখতে পাবে। কিন্তু বাস্তবে সে ছোট হয়ে যায়নি; বরং পাহাড়ের উঁচু চূড়ায় অবস্থানের কারণে তাকে ছোট মনে হচ্ছে। তো উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় যে আরোহন করল এবং যারা নিচে রয়ে গেলে সবাই একে অন্যকে ছোট মনে করে। অহঙ্কারী ব্যক্তির দৃষ্টান্তও এই পাহাড়ে আরোহনকারী ব্যক্তির মতো। অহঙ্কারী ব্যক্তি নিজের ধারণা ও কল্পনার জগতে নিজেকে অনেক বড় ও উঁচু মনে করে বিধায় সে অন্যকে হেয় ও ছোট মনে করে। কিন্তু তাই বলে মানুষ তাকে বড় মনে করে না; বরং অন্যরাও তাকে ছোটই মনে করে। অহঙ্কার করে কেউ কখনো বড় হতে পারে না।

হযরত যুননুন মিসরী রহ. এর ঘটনা
কথা প্রসঙ্গে একটি ঘটনা মনে পড়ল। যুননুর মিসরী নামে মিসরের একজন বুযুর্গ ও আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি ছিলেন। লোকেরা তাকে অনেক বড় বুযুর্গ ও আল্লাহর ওলী হিসেবেই চিনত। লোকেরা কখনো কখনো তাঁর সামনে তাঁর খুব প্রশংসা করত। তার নামায, যিকির, ইবাদত ইত্যাদির প্রশংসা করত। প্রশংসা শুনে তিনি খুব হাসতেন। একবার এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, আপনার প্রশংসা করা হলে এত খুশি হন, এত হাসেন! এতে তো বুঝা যায় আপনি প্রশংসা পছন্দ করেন, নিজেকে অনেক ভাল মনে করেন। এটা কি অহঙ্কার নয়?
হযরত যুননুন মিসরী রহ. উত্তরে বললেন- মূলত আমি আমার প্রশংসা করা হয় এজন্য খুশি হই না। তোমরা যখন আমার প্রশংসা
কর মূলত তখন তোমরা আল্লাহ তাআলারই প্রশংসা কর। আমার প্রশংসা বলতে তো কিছু নেই। আমার যত গুণের প্রশংসা সবই তো আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। তো আমি যখন দেখি তোমরা আমার মালিকের নেয়ামতের প্রশংসা করছ তখন আমি অত্যন্ত আনন্দিত হই এবং হাসতে থাকি।

অহঙ্কার দূর করতে বিনয়ী হওয়া চাই
বিভিন্ন কারণে বিভিন্নভাবে মানুষের মধ্যে অহঙ্কারের অনুপ্রবেশ ঘটে। ইলমের কারণেও কেউ কেউ অহঙ্কারী হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে, ইলমের দ্বারা যেমনিভাবে মানুষ সম্মানিত ও আল্লাহর প্রিয় হতে পারে তেমনি ইলমের কারণে বিপদগ্রস্তও হতে পারে। আলেম হয়েও কেউ যদি নিজেকে অন্যের তুলনায় উত্তম ও ভাল মনে না করে; বরং অন্তরে বিনয় ও নম্রতা সৃষ্টি করে তাহলে এ ইলম নূর হবে। পক্ষান্তরে আলেম হয়ে যদি কেউ অহঙ্কারী হয়, অন্যকে ছোট ও তুচ্ছ জ্ঞান করে এবং নিজেকে উত্তম ও ভালো মনে করে তাহলে এ ইলমই তার ধ্বংসের কারণ হবে।
অহঙ্কার থেকে বাঁচার জন্য বিনয় অবলম্বন করতে হবে। মিশকাত শরীফের হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من تواضع لله رفعه الله
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করবে আল্লাহ তাআলা তাকে উঁচু মর্যাদা দান করবেন।
ومن تكبر وضعه الله
যে ব্যক্তি অহঙ্কার করবে আল্লাহ তাআলা তাকে মানুষের দৃষ্টিতে ছোট ও হেয় করে দিবেন।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, প্রত্যেক মানুষের গর্দানের সঙ্গে দুটি কুদরতি রশি আটকানো রয়েছে। একটি রশি আল্লাহ তাআলার আরশে আযীম থেকে ঝুলানো অপরটি যমিনের সর্বনিম্ন স্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মুহাদ্দিসগণ বলেন- কেউ যখন বিনয় অবলম্বন করে নিজেকে ছোট ও হেয় জ্ঞান করে মাথা ঝুকিয়ে দেয় তখন তার গর্দানে লাগানো আরশে আযীমের সঙ্গে ঝুলানো রশিতে টান পড়ে। এভাবে নীচু হয়ে থাকলে বারবার উপরের রশিতে টান পড়ে এবং উপর থেকে তাকে টেনে আরশে আযীম পর্যন্ত উঠিয়ে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে কেউ যখন অহঙ্কারী হয়ে মাথা উঁচু করে তখন তার গর্দানে লাগানো নীচের দিকে রশিতে টান পড়ে। ফলে এ রশি দ্বারা তাকে টেনে একেবারে যমিনের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত নামিয়ে নেয়া হয়। অর্থাৎ বিনয়ী ব্যক্তি নিজেকে যত ছোট মনে করবে আল্লাহ তাআলা মানুষের দৃষ্টিতে তার মান-মর্যাদা তত বৃদ্ধি করে দিবেন। আর অহঙ্কারী ব্যক্তি যত বেশি অহঙ্কার করবে আল্লাহ তাআলা তাকে মানুষের দৃষ্টিতে তত বেশি হেয় ও ছোট করে দিবেন।
এজন্য রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করতেন,
اللهم اجعلني في عيني صغيرا وفي أعين الناس كبيرا
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার দৃষ্টিতে ছোট বানিয়ে রাখুন আর মানুষের দৃষ্টিতে বড় বানিয়ে দিন।
নিজের দৃষ্টিতে নিজে ছোট থাকাটাই হল বিনয়। নিজেকে নিজে ছোট মনে করতে পারলেই অন্তরে আর অহঙ্কার প্রবেশ করতে পারবে না। আর অন্যের দৃষ্টিতে বড় হওয়ার দুআ করা হয়েছে এজন্য যে, অন্যের দৃষ্টিতে বড় হলে আমি দ্বীনের কাজ করতে পারব। মানুষ আমার প্রতি আস্থা রেখে আমার কাছ থেকে দ্বীনি বিষয় শিক্ষাগ্রহণ করবে এবং আমি দ্বীনি বিষয় বললে মানুষ তা গ্রহণ করবে। এ দ্বীনি ফায়দার জন্য বলা হয়েছে, মানুষের দৃষ্টিতে বড় বানিয়ে দিন। কিন্তু আমি মূলত বড় নই, আমি ছোট আর সবাই আমার চেয়ে বড় ও ভাল।

অহঙ্কার দূর করে বিনয়ী হওয়ার উপায়
ক্বলব থেকে অহঙ্কার দূর করে বিনয় ও নম্রতার গুণ অর্জনের জন্য কোন কামেল শায়খের সান্নিধ্য লাভ করা আবশ্যক। কোন কামেল পীর ও মুর্শিদের সংস্পর্শ ও সোহবত ব্যতীত এ গুণ অর্জন করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. এর ঘটনা মনে পড়ল। হযরত গাঙ্গুহী রহ. অনেক বড় মাপের একজন বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। তাঁকে ফকীহুন নফস বলা হয়। তিনি একবার হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. এর খানকায় উপস্থিত হলেন, বাইয়াত হওয়া বা আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে সেখানে যাননি। তিনি গিয়েছিলেন মূলত হযরত মাওলানা শায়খ মুহাম্মদ রহ. এর সঙ্গে একটি বিষয়ে বাহাস ও বিতর্ক করার উদ্দেশ্যে। হযরত শায়খ মুহাম্মদ রহ., হাফেজ যামেন রহ. ও হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. এ তিন বুযুর্গ থানা ভবনে একই খানকায় অবস্থান করতেন। শায়খ মুহাম্মদ রহ. একজন বড় মাপের আলেম ছিলেন। তাঁর রচিত একটি কিতাব পড়ে গাঙ্গুহী রহ. একটি মাসআলায় ভুল দেখতে পান। তখনই তিনি নিয়ত করলেন যে, একদিন খানকায় গিয়ে শায়খ মুহাম্মদ রহ. এর ভুল শুধরে দিয়ে আসবেন। সে উদ্দেশ্যেই তিনি খানকায় আগমন করলেন।
খানকায় প্রবেশের সময় প্রথমেই হাজী সাহেব রহ. এর কামরা। গাঙ্গুহী রহ. হাজী সাহেবের কামরায় ঢুকে পড়লেন। হাজী সাহেব কুশল বিনিময়ের পর আগমনের কারণ শুনে বললেন- আপনি বয়সে ছোট। শায়খ মুহাম্মদ রহ. এর মতো এত বড় একজন আলেম ও আল্লাহর ওলীর সঙ্গে বিতর্ক করতে এসেছেন! আপনি কিছুক্ষণ এখানে বসুন। গাঙ্গুহী রহ. বসে পড়লেন। হাজী সাহেবের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর গাঙ্গুহী রহ. এর মনে হাজী সাহেবের হাতে বাইয়াত হওয়ার আগ্রহ জন্ম নিল। তিনি বিতর্ক-বাহাসের কথা ভুলে গেলেন। বললেন- হযরত! আমাকে বাইয়াত করুন। হাজী সাহেবের কাছে বাইয়াত হওয়ার পর তিনি দীর্ঘ চল্লিশ দিন খানকায় থেকে গেলেন।
একদিন হাজী সাহেব রহ. গাঙ্গুহী রহ.কে ডাকলেন খাবার খাওয়ার জন্য। দস্তরখানে হাজী সাহেবের সামনে ছিল গোশত আর গাঙ্গুহী রহ. এর সামনে ডাল। হাজী সাহেব রুটি খাচ্ছেন গোশত দিয়ে আর গাঙ্গুহী রহ. খাচ্ছেন ডাল দিয়ে। এমন সময় হাফেজ যামেন রহ. কামরায় প্রবেশ করলেন। তিনি খাবার দেখে হাজী সাহেবকে লক্ষ করে বললেন- আপনি এ কেমন কাজ করছেন, একসঙ্গে খাচ্ছেন অথচ আপনি গোশত খাচ্ছেন আর তাকে খাওয়াচ্ছেন ডাল। তাকেও গোশত দেন না কেন?
হাজী সাহেব উত্তরে বললেন- ও তো এ দস্তরখানে বসে খাওয়ারই উপযুক্ত নয়। তাকে তো এ সিঁড়ির কাছে খাবার দেয়া দরকার ছিল। তাকে এখানে বসতে দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে এটাই তো বেশি। হাজী সাহেব রহ. মূলত এসব করছিলেন গাঙ্গুহী রহ.কে পরীক্ষা করার জন্য। তিনি গভীরভাবে গাঙ্গুহী রহ. এর চেহারা পর্যবেক্ষণ করছিলেন, এ আচরণের কারণে তার চেহারায় কোন পরিবর্তন এল কি না? দেখা গেল- এভাবে কথা বলার পরও গাঙ্গুহী রহ. এর কাছে খারাপ লাগল না এবং চেহারায় বিন্দুমাত্র পরিবর্তনও পরিলক্ষিত হয়নি। হাজী সাহেব বুঝতে পারলেন- গাঙ্গুহীর ক্বলব থেকে অহঙ্কার দূর হয়ে গিয়েছে। তো হাজী সাহেবের সোহবতে মাত্র চল্লিশ দিন অবস্থানের দ্বারাই গাঙ্গুহী রহ. এর ক্বলব থেকে অহঙ্কার দূর হয়ে গিয়েছিল এবং বিনয় ও নম্রতার গুণ অর্জিত হয়েছিল। এজন্য অহঙ্কার দূর করার জন্য কোন কামেল শায়খের সোহবত ও সান্নিধ্যে থাকা আবশ্যক।

বেশি বেশি শোকর আদায় করা
অহঙ্কার দূর করার তৃতীয় পথ ও পদ্ধতি হল, বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের শোকর আদায় করা। এর দ্বারা অন্তর থেকে অহঙ্কার দূর হয়। আমরা সদাসর্বদাই আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের মাঝে ডুবে আছি। আমাকে ভাবতে হবে- আমি তো কখনোই এ নেয়ামতের উপযুক্ত ছিলাম না। আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া এ নেয়ামত লাভের কোন উপযুক্ততা আমার মাঝে নেই। আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দিয়েছেন তা শুধুই তার দয়া ও রহমত। এ কথা খেয়াল করে করে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করতে হবে।
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত থানভী রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা ডা. আব্দুল হাই আরেফী রহ. তাঁর নানার কথা লিখেছেন, তিনি প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে বসে বসে পড়তেন- اللهم لك الحمد والشكر (অর্থাৎ, হে আল্লাহ্! সকল প্রশংসা ও শোকর আপনারই) ডা. আব্দুল হাই সাহেব একদিন নানাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি রাতে বসে বসে اللهم لك الحمد والشكر পড়েন কেন? উত্তরে হযরতের নানা বললেন- দেখ, প্রতিদিন কত নেয়ামত আমরা ভোগ করি! সকাল থেকে এ পর্যন্ত কত নেয়ামত ভোগ করেছি। সব নেয়ামতের তো শোকর আদায় করা হয়নি। এজন্য এখন আল্লাহর নেয়ামতগুলোর কথা খেয়াল করে করে তাঁর শোকর আদায় করছি।
তো এভাবে বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করলে এবং শোকর আদায় করলে অন্তর থেকে অহঙ্কার দূর হয়ে যাবে।

নিজের অবস্থার প্রতি খেয়াল করা
অহঙ্কার দূর করার চতুর্থ পথ ও পদ্ধতি হল, নিজের অবস্থার প্রতি খেয়াল করা, চিন্তা করা। আমি চিন্তা করব- আমার শুরু অবস্থাটা কেমন ছিল, শেষ অবস্থা কেমন হবে এবং এ দুয়ের মাঝের অবস্থায় কেমন আছি। কোন এক বুযুর্গ আমাদের এ তিন অবস্থার বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে- তোমার শুরু হল নাপাক বীর্য, শেষ অবস্থা হল মৃত গলিত লাশ আর এ দুয়ের মাঝে নাপাকি ও আবর্জনা বহন করে ঘুরে বেড়াও। তিনি বড় সত্য কথা বলেছেন। আমাদের শুরু এবং সূচনাই হল নাপাক। নাপাক বীর্য থেকে আমাদের জন্ম। এটা এমনই নাপাক যে, এর কারণে সমগ্র শরীর ধুয়ে গোসল করা ফরজ হয়ে যায়। এটা যেখানেই লাগবে তা-ই নাপাক হয়ে যায়। যে জিনিসেই তা লাগে ঐ জিনিসই ধুয়ে পবিত্র করা জরুরী হয়ে পড়ে। এই নাপাক বীর্যই আমার সূচনা। আর আমার শেষ অবস্থা তো এই- আমি মৃত্যুবরণ করলে আমার এ দেহ একটি গলিত লাশে পরিণত হবে। এ দেহ এতই মূল্যহীন যে এটাকে মানুষ মাটির উপরেও ফেলে রাখতে চায় না। এটা পঁচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াবে বলে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়। আর এ দুই অবস্থার মাঝামাঝি সময়ে আমি কিছু নাপাকি ও আবর্জনা বহন করে ঘুরে ফিরি। আমার পেট তো প্র¯্রাব, পায়খানা, বীর্য ইত্যাদি দুর্গন্ধযুক্ত নাপাকি দিয়ে ভরপুর। এগুলো নিয়েই আমার চলাফেরা। তো যার অবস্থা এমন সে অহঙ্কারী হতে পারে না কখনোই। তার এ অবস্থায় অহঙ্কার করার মতো কি কিছু আছে? এভাবে নিজের অবস্থার প্রতি খেয়াল করলেও অন্তর থেকে অহঙ্কার দূর হয়ে যাবে।

অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করা
অহঙ্কার দূর করার পঞ্চম পথ ও পদ্ধতি হল, অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করা। অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকিরের দ্বারা অন্তর থেকে অহঙ্কার দূর হয়। কারণ, যিকিরের দ্বারা অন্তরে আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব ও বড়ত্বের ইয়াকীন দৃঢ় হয়। যত বেশি যিকির করা হবে তত বেশি আল্লাহ তাআলার বড়ত্বের ইয়াকিন অন্তরে দৃঢ় ও মজবুত হবে। আর যখন অন্তরে আল্লাহ তাআলার বড়ত্বের ও মহত্তে¡র বিশ্বাস দৃঢ় হবে তখনই নিজের বড়ত্ব ও অহঙ্কার দূরীভূত হয়ে যাবে। এটা স্বাভাবিক নিয়ম- কেউ যদি নিজের থেকে কাউকে বড় জানে তাহলে ঐ ব্যক্তির সামনে আর তার কোন বড়ত্ব ও অহঙ্কার থাকে না। তো অন্তরে আল্লাহর বড়ত্বের ইয়াকিন ও বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে গেলে নিজের বড়ত্ব ও অহঙ্কার অন্তর থেকে বের হয়ে যাবে এবং নিজেকে ছোট ও হীন মনে হতে থাকবে। ফলে অন্তরে বিনয় সৃষ্টি হবে।
এ পাঁচটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে ইনশাআল্লাহ আমাদের অন্তর থেকে অহঙ্কার দূর হয়ে যাবে। সংক্ষেপে পাঁচটি পদ্ধতি আবার উল্লেখ করছি-
০১. বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করা।
০২. কামেল শায়খের সোহবত ও সান্নিধ্য লাভ করা।
০৩. বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করা।
০৪. নিজের অবস্থার প্রতি খেয়াল করা।
০৫. অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে অহঙ্কার থেকে মুক্ত থাকার এবং বিনয় ও নম্রতার গুণ অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ    www.monthlyniamat.com

Leave a comment

আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা

দুনিয়াতে এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা সুখ ও শান্তির জন্য সব ধরনের উপায়-উপকরণের অবলম্বন করে। গরমের কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘরে, গাড়িতে ও অফিসে এসি-র ব্যবস্থা করে। আরামের সব উপকরণ থাকা সত্ত্বেও মনে শান্তি নেই। বুকে অশান্তির আগুন জ্বলে। শরীরে এসির বাতাস লাগলেও ভিতরের অশান্তির আগুন নিভে না। কারণ, অন্তরে আল্লাহর মারেফাতের নূর নেই। আল্লাহ পাকের সঙ্গে আত্মার গভীর সম্পর্ক নেই। সুখ-শান্তি মূলত মনের ব্যাপার। মনে শান্তি না থাকলে বাহ্যিক সকল উপায়-আপকরণ অবলম্বন করলেও সুখ লাভ হয় না। অন্তরে সুখ আসে আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন-
اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ
জেনে রাখ, আল্লাহ যিকিরেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। সূরা রাআদ : ২৮
যিকির করতে হবে নিবিষ্ট মনে। পরিপূর্ণ ধ্যানের সাথে যিকির না করলে পরিপূর্ণ প্রশান্তি লাভ হয় না। যেমন, গাড়িতে এসি চলছে, আবার গাড়ির গ্লাসও খোলা আছে। এমন হলে আরাম পাওয়া যাবে না। এসির আরাম পেতে হলে বাইরের বাতাস প্রবেশের পথ বন্ধ করতে হবে। তদ্রূপ দেহের কোন অঙ্গ যদি খোলা থাকে, সে অঙ্গ দিয়ে আল্লাহর নাফরমানি প্রবেশ করে তাহলে ঐ ব্যক্তি প্রশান্তি লাভ করতে পারবে না। গীবত, হারাম বস্তু দর্শন, অন্যায় কথা ইত্যাদি সবই আল্লাহর নাফরমানি। বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে এসব আমাদের দেহে প্রবেশ করছে।
হৃদয়কে আল্লাহ পাকের রহমত, মহব্বত ও ইশকের পাত্র বানাতে চাইলে আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে দুনিয়ার সব কিছু থেকে আলাদা করে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করতে হবে। চোখ দিয়ে হারাম বস্তু দেখা যাবে না, কানে হারাম শোনা যাবে না, হাতে হারাম স্পর্শ করা যাবে না, পায়ে হারাম পথে হাটা যাবে না, অন্তরে কুচিন্তা করা যাবে না। এসব কিছু ছেড়ে আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ যিকির করলে যিকিরকারীর দেহ থেকে নিয়ে আল্লাহ পাকের আরশ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এ যিকির দ্বারাই অন্তরে শান্তি আসবে। দুনিয়ার পেরেশানী দূর হয়ে যাবে। এ জন্য প্রত্যেক দিন কিছু না কিছু সময় বের করে আল্লাহ পাকের যিকির করা উচিত। এভাবে নিয়মিত যিকির করলে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।
আল্লাহ পাকের সঙ্গে সম্পর্কের সৃষ্টির চারটি তরিকা রয়েছে- সিলসিলায়ে চিশতিয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া ও সোহরাওয়ারদিয়া।
ফিক্হ শাস্ত্রে যেমন চার মাযহাব রয়েছে তেমনি চার তরিকা রয়েছে তাসাউফেও। এ চার তরিকার সকল মাশায়েখ ও বুযুর্গানে দ্বীন এ বিষয়ে একমত যে, আল্লাহ পাকের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক সৃষ্টি করা এবং তাঁর মহব্বত লাভের উপায় হল তিনটি। এ তিনটি উপায় অবলম্বন করলে অন্তরের সম্পর্ক সৃষ্টি হবে অন্তর্যামীর সঙ্গে। উপায় তিনটি হল-
১. كــثرة ذكــر الله – বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার যিকির করা।
২. صحبة أهل الله – আল্লাহওয়ালাগণের সাহচর্য অবলম্বন করা।
৩. الـتـفـكر في خلق الله – আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ফিকির করা।
আমরা আল্লাহর যিকির করি জিহ্বা দিয়ে। জিহ্বার স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা। একে তরতাজাও রাখেন আল্লাহ তাআলা। জিহ্বা শুকিয়ে গেলে মানুষের পক্ষে কথা বলা সম্ভব না। জিহ্বা রাত, দিন, সকাল, সন্ধ্যা, সুস্থ, অসুস্থ, জাগ্রত, ঘুমন্ত সর্বাবস্থায় ভেজা ও সিক্ত থাকে। কে এভাবে জিহ্বাকে সদা সিক্ত ও আর্দ্র রাখেন? উত্তর, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা। আমাদের দ্বারা এভাবে ভিজিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। জাগ্রত অবস্থায় পারলেও ঘুমন্ত অবস্থায় পারতাম না। সুস্থ অবস্থায় সম্ভব হলেও অসুস্থ অবস্থায় সম্ভব হত না। আল্লাহ পাক করুণা করে আমাদের জিহ্বা ভিজিয়ে রাখেন। যখন যে পরিমাণ প্রয়োজন সে পরিমাণ সরবরাহ করেন। চুপ থাকা, কথা বলা, খাবার গ্রহণসহ যে সময়ের জন্য যে পরিমাণ লালা নিসৃত হওয়া দরকার সে পরিমাণ নিসৃত করেন। খাবারের সময় কী পরিমাণ লালা নিসৃত হয় তা আমরা ভেবে দেখি না। এভাবে একটু অনুমান করা যায়, কারো সামনে তেঁতুল খেলে বা সামনে তেঁতুল রাখা হলে কী পরিমাণ পানি বের হয়? মুহূর্তেই মুখ পানিতে ভরে যায়। খাবার গ্রহণের সময় এভাবে পানি বের হয়। ফলে খাবার সহজে গলায় প্রবেশ করে।
কাউকে গালি দেয়া, কারো গীবত করা, চোগলখোরী করা, কাউকে কষ্ট দেয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা জিহ্বাকে সিক্ত ও সচল রাখেন নি; বরং সিক্ত ও সচল রেখেছেন আল্লাহ পাকের যিকিরের জন্য; অনর্থক কাজের জন্য নয়। এ জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অসংখ্য গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এর বিনিময়ে বড় পুরস্কারের ঘোষণাও রয়েছে। বুখারী শরীফে এসেছে, হযরত সাহল ইবনে সাআদ রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
من يضمن لي ما بين لحييه وما بين رجليه أضمن له الجنة
যে ব্যক্তি আমাকে এ নিশ্চয়তা দিবে যে, সে তার জিহ্বাকে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করবে, হারাম ও পাপের পথ থেকে দূরে রাখবে- আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নিচ্ছি।
তাই বিশেষভাবে জিহ্বা ও লজ্জাস্থানকে পাপাচারের থেকে রক্ষা করা চাই। জিহ্বা দিয়ে আল্লাহ পাকের যিকির বেশি বেশি করা চাই। যে সময়টাতে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলা হয় সে সময়টাই জীবনের সবচে’ মূল্যবান সময়। এ সময়টাই আসল কাজে ব্যয় হল। তো যবানের আল্লাহ আল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলাই হলো যবানের যিকির।
আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গের আলাদা আলাদা যিকির রয়েছে। একেক যিকিরের একেক পদ্ধতি।
১. ذكر اللسان بالثناء – জিহ্বার যিকির হল, আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা পাঠ করা।
২. ذكر الأذنين بالإصغاء – কানের যিকির হল, হক্ব কথা শোনা, দ্বীন ও ঈমানের কথা শোনা, আল্লাহর কালাম শোনা- এক কথায় যা শুনলে আমার দিল আল্লাহ অভিমুখী হবে, ক্বলব আল্লাহ তাআলার মারেফাত ও মহব্বতের নূরে আলোকিত হবে তা শোনাই হল কানের যিকির। বেহুদা ও অশ্লীল কথা-বার্তা, গীবত-শেকায়েত, গান-বাজনা থেকে অবশ্যই কান হেফাজত করতে হবে।
৩. ذكر اليدين بالعطاء – হাতের যিকির হল, দান করা। গোপনে দান করা, প্রকাশ্যে দান করা। কাউকে সাহায্য করা, রাস্তা দেখিয়ে দেয়া কিংবা ভালোর প্রতি ইঙ্গিত করা, কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস শরীফ ছোঁয়া, কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা লেখা, দ্বীনি বিষয় লিখে মানুষের কাছে পৌঁছানো ইত্যাদি। এগুলো সবই হাতের যিকির।
৪. ذكر القلب بالخوف والرجاء – দেহের সর্বশ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো, অন্তর। অন্তরের যিকির হলো, আল্লাহ পাকের ভয়, আল্লাহর আযাবের ভয় অন্তরে রাখা। আল্লাহ তাআলার রহমত, দয়া ও জান্নাতের আশা করা। রহমতের আশা এবং আযাবের ভয়, এ দু’য়ের নাম ঈমান। এটাই কলবের যিকির।
হাদীস শরীফে এসেছে, এক যুবক মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- كيف تجدك
কেমন আছ? অর্থাৎ এ মুমূর্ষু অবস্থায় তোমার দিলের অবস্থা কী?
যুবক উত্তরে বলল,
والله يا رسول الله إني أرجو الله وإني أخاف ذنوبي
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহ পাকের রহমতের আশা করছি এবং আমার গোনাহের কারণে শঙ্কা বোধ করছি।
এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
لا يجتمعان في قلب عبد في مثل هذا الموطن إلا أعطاه الله ما يرجو وآمنه مما يخاف
যার অন্তরে এ দুটি বিষয় (রহমতের আশা ও শাস্তির ভয়) একসঙ্গে থাকে আল্লাহ তাকে যা আশা করে তা দান করেন এবং যে ব্যাপারে সে ভীতি-সন্ত্রস্ততা থেকে মুক্তি দেন। তিরমিযী
আমাদের অনেক গোনাহ হয়। খুব বেশিই হয়। এজন্যই আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
قُلْ یٰعِبَادِیَ الَّذِیْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَۃِ اللهِ ؕ اِنَّ اللهَ یَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِیْعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ
হে নবী! আপনি বলুন, হে আমার ঐ সকল বান্দারা যারা নিজেদেও ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছ, তোমরা আল্লাহ পাকের রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ পাক সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। সূরা যুমার : ৫৩
তাই এ আশা রাখতে হবে, আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করবেন। আযাব থেকে মুক্তি দিবেন। আল্লাহর আযাবের চেয়ে রহমত অগ্রগামী। আল্লাহ পাকের রহমত পাপরাশিকে ধুয়ে মুছে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এজন্য গোনাহ হয়ে গেলে আল্লাহ পাকের রহমতের আশাবাদী হয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করতে হবে।
আমরা যত বড় গোনাহগারই হই না কেন আল্লাহর অনুগ্রহের সাগর বিশাল। তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের সাগরে ডুব দিতে পারলে গোনাহ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। নদী বা সমুদ্রে পেশাব করলে কী নাপাক হয়। পেশাব নাপাক ঠিকই কিন্তু বিশাল নদী বা সমুদ্রে পড়লে স্রোতে মিশে পবিত্র হয়ে যায়। তদ্রূপ আমাদের গোনাহ মহান রবের রহমত ও মাগফেরাত সাগরে পড়ে স্রোতে মিশে পবিত্র হয়ে যাবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, পূর্ববর্তী উম্মতের এক ব্যক্তি সারা জীবন পাপ কাজ করেছে। মৃত্যুর পূর্বে সে তার সন্তানদের একত্র করে বলল, এখন আমার মৃত্যুর সময় হয়ে গেছে। ঈমান আনার পরে অনেক নেক কাজ করার দরকার ছিল। আমি কোন নেক কাজ করিনি। সারা জীবন গোনাহের মাঝেই ডুবে ছিলাম। মৃত্যুর পর দাফন করা হলে আমার কী অবস্থা হবে? আমার শাস্তি তো অনিবার্য। আযাব থেকে কিছুতেই রেহাই পাবো না। কবরের ফেরেস্তাকে কী উত্তর দিবো?
সে সন্তানদের বলল, তোমরা বল, বাবা হিসেবে আমি কেমন ছিলাম?
সন্তানরা বলল, আপনার মত বাবা সবার ভাগ্যে জোটে না। এত ভালো বাবা হয় না।
এরপর সে বলল, শুনো! আমি তোমাদের ওসিয়ত করছি, মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে আগুনে জ্বালিয়ে দিবে। শরীর আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেলে মসলার মতো করে পিষে ফেলবে। এরপর এ ছাই তিন ভাগে ভাগ করবে। এক ভাগ পানিতে ফেলে দিবে। এক ভাগ বন-জঙ্গলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিবে। আরেক ভাগ বাতাসে উড়িয়ে দিবে। সন্তানরা তার ওসিয়ত যথাযথভাবে পূরণ করে।
সে মনে করেছিলো, এমন করলে তাকে আর খোঁজেও পাওয়া যাবে না, তার আযাবও হবে না। কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে পালিয়ে সে যাবে কোথায়! আল্লাহ তাআলা বাতাসকে নির্দেশ দিলেন, তুমি তোমার অংশ একত্রিত কর। বাতাস আদেশ পালন করল। তার অংশ একত্র করল। মাটিকে আল্লাহ পাক বললেন, তুমি তোমার মধ্যে আমার এ নাফরমান বান্দার যে অংশটুকু আছে তা জমা কর। মাটি জমা করে দিল। পানিকে বললেন, তোমার ভিতর আমার এ নাফরমান বান্দার যে অংশ আছে তা একত্রিত কর। পানিও তার অংশ জমা দিল।
এরপর আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাকে আদেশ দেন তিন অংশ একত্রিত করতে। দুনিয়ায় সে যেমন ছিল তেমনই করে তাকে সৃষ্টি করা হয়।
আল্লাহ তাআলা তাকে বললেন, হে বান্দা! এমনটি তুমি কেন করেছ?
সে বলল, হে আল্লাহ আমার পাপের কথা স্মরণ করে আপনার ভয়ে আমি এ কাজ করেছি।
আল্লাহ তাআলা বললেন, মৃত্যুর পূর্বে পাপের কথা স্মরণ করে এভাবে আমাকে ভয় করাটাই ছিল তোমার তওবা। একেই তওবা বলে। আর এ ভয় ও তওবার কারণে আমি তোমার জীবনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিলাম।

তাই যত গোনাহই হোক না কেন আল্লাহর রহমতের প্রতি তাঁর ক্ষমাশীল গুণের কারণে সর্বদা আশাবাদী থাকা চাই। সাথে সাথে তাঁর শাস্তিরও ভয় রাখা চাই।
৫. ذكر العينين بالبكاء – চোখের যিকির হল, আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা। দুনিয়ার রূপ আর হারাম জিনিস দেখে মজা নেয়ার জন্য আল্লাহ পাক চোখ দেননি। আল্লাহ পাক চোখ দিয়েছেন, চোখে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করেছেন আল্লাহর ভয়ে, জাহান্নামের ভয়ে কান্নার জন্য। আল্লাহকে রাজি-খুশি করতে চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত করার জন্য।
চোখ থেকে পানি ফেলে তওবা করলে আল্লাহ তাআলা জীবনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। গোনাহের পাহাড়কে মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। পাপ-পঙ্কিলতাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিবেন।
লক্ষ করুন, আল্লাহ তাআলা আমাদের মুখের পানি মিষ্টি বানিয়েছেন, আর চোখের পানি লবণাক্ত বানিয়েছেন। যেমনিভাবে পুকুর-নদীর পানি মিষ্টি আর সাগরের পানি নোনা বানিয়েছেন। পুকুর-নদীর পানি অধিক ব্যবহারের ফলে তা নষ্ট ও দূষিত হয়ে যায়। এ নষ্ট পানি সাগরের পানির সঙ্গে মিশে। সাগরের নোনা পানি এগুলোর ময়লাকে পরিষ্কার করে দেয়। তেমনি চোখের পানিকে আল্লাহ তাআলা লবণাক্ত বানিয়েছেন এজন্য যে, তা মানুষের জীবন থেকে পাপাচার ও গোনাহের ময়লা-আবর্জনাকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন। আমাদের সকলকে নেক আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন        http://monthlyniamat.com

 

Leave a comment

বাংলাদেশী হাফেজী কোরআন শরীফ

বাংলাদেশী হাফেজী কোরআন শরীফ. Bangladeshi Hafiji Quran

Leave a comment

Computer Book

Full Bangla html

Leave a comment

Photo

PHOTO

Leave a comment

Bangladeshi islamic book

তাবলীগের প্রশ্ন-উত্তর QuestionAndAnswersAboutTabligh-S-M-Saleheen(ShaikhulHadithMaulanaShaukatAli)

Leave a comment

Tabliger bangla boi

দাওয়াতের নববী উসূল Daoater nobobi osul bangla. pdf

Leave a comment

ডাকাত আল্লাহওয়ালা হয়ে গেছে

(মাওলানা তারিক জামীল) আমরা কলেজে গাশ্ত করছিলাম।একটি কক্ষের দরজায় আওয়াজ দিলে দরজা খুলে একটি ছেলে বেরিয়ে এল।
আমরা তার সঙ্গে আধা ঘন্টা কথা বললাম।আমাদের কথা শুনে সে কাঁদতে শুরু করে।পরে জিজ্ঞাসা করে, আপনারা কী চাচ্ছেন? আমরা বললাম,চার মাসের জন্য আল্লাহর পথে বের হয়ে ঈমানি জিন্দেগি শিখে নাও।সে বলল, আমি প্রস্তুত আছি। ঠিক একচিল্লাহ-চল্লিশ দিন পর ছেলেটির সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমাকে জড়িয়ে ধরে আপ্লুতকন্ঠে বলল,মাওলানা সাহেব,আপনি জানেন না,আপনারা আমাকে কোন জীবন থেকে বের করে এনেছেন।আমি ডাকাত ছিলাম। আপনারা যখন দাওয়াতের মিশন নিয়ে আমাদের দরজায় করাঘাত করেন,তখনও আমরা অমুক স্থানে ডাকাতি করার পরিকল্পনা প্রস্তুত করছিলাম।তারপর এমন একটি সময় এল যে,আমি দেখলাম,ছেলিটির মুখে লম্বা দাড়ি,মাথায় পাগড়ি,যেন আকাশের ফেরেশ্তা ধরায় নেমে এসেছে। আমার বন্ধুগণ,এমন হাজারো-লাখো নমুনা দুনিয়াতে আছে। জমি প্রস্তুত। শুধু চাষ করার লোকের প্রয়োজন।

Leave a comment

হাদীস

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,মুনাফিকের উদাহরণ হচ্ছে সে ডাকা ছাগীর ন্যায় যে দুটি ছাগলের পালের মধ্যে থাকে,একবার এদিকে(এক পালের দিকে)দৌড়ায় এবং আরেকবার অন্যটির দিকে (অন্য পালের দিকে) দৌড়ায়।  (মুসলিম)

Leave a comment